টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলে কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে গমন ও স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তা, বাড়ির উঠান, স্থানীয় গারো আদিবাসীদের আবাদী কৃষি জমি কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে জোরপূর্বক বেদখল করে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছে স্থানীয় গারো আদিবাসীরা। এ ঘটনায় গত ১ জুলাই, ২০২৪ আইপিনিউজ এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তদন্ত প্রতিবেদন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে প্রেরণের জন্য টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: সেলিম রেজা কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্মারক নং এনএইচআবাসিক/অভিযোগ/সুয়োমটো ঢা, ২৫/২৪-১৪৮৬(২) এর মূলে জারিকৃত এক আদেশনামায় এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আগামী ০৭/০৮/২০২৪ এর মধ্যে কমিশন বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কে কমিশনের আদেশনামায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশনামার অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এর সচিব বরাবর প্রেরণের কথাও উল্লেখ আছে।
কমিশনের আদেশনামায় উল্ল্যেখ করা হয়, “০১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ ipnewsbd.net এ প্রকাশিত “টাঙ্গাইলের মধুপুরে শিশুদের বিদ্যালয়ে গমন ও স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তা বেদখলের অভিযোগ” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।“
আদেশনামায় বলা হয়েছে, “টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলে কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে গমন ও স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তা, বাড়ির উঠান, স্থানীয় গারো নৃগোষ্ঠীর আবাদী কৃষিজমি কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে জোরপূর্বক বেদখল করে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠে এসেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কমিশন মনে করে এ ঘটনার নিবিড়ভাবে তদন্ত করে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।”
প্রসঙ্গত, গত ০১ জুলাই, ২০১৪ তারিখ আইপিনিউজ (ipnewsbd.net) এ স্থানীয়দের বরাত দিয়ে “টাঙ্গাইলের মধুপুরে শিশুদের বিদ্যালয়ে গমন ও স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তা বেদখলের অভিযোগ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আইপিনিউজের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উক্ত অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আদেশনামা এবং মধুপুরের গারো অধ্যুিষত এলাকায় ভূমি সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় আদিবাসী নেতা জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ এর সভাপতি ইউজিন নকরেক আইপিনিউজকে বলেন, এটা আশাব্যঞ্জক যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এর মতো উচ্চপর্যায়ের একটি সরকারি সংস্থা মধুপুরের গারো অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামের লোকজনের চলাচল এবং শিশুদের বিদ্যালয়ে গমনাগমনের রাস্তা বেদখল হয়ে যাওয়ার স্থানীয়দের যে অভিযোগ তা আমলে নিয়েছে এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আসলে মধুপুরের গারোসহ অন্যান্য আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা বহুদিনের। বিগত সময়ে বিভিন্নভাবে এখানকার আদিবাসীরা নিজ গ্রাম এবং ভূমি থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে কিন্তু কোন ক্ষতিপূরণ পায় নি। সেজন্য আমরা চাই এ অঞ্চলের আদিবাসীদের কোন ভূমি অধিগ্রহণ করতে হলে যেন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুস্মরণ করে এবং স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে আলোচনা করে সম্মতি নিয়ে করা হয়।
তিনি আরো জানান, গত ২৮ জুন ২০২৪ ইং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আদিবাসী নেতৃবৃন্দ এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বসবাসরত আদিবাসী নেতৃবৃন্দ নিয়ে দেশের বিভিন্ন সমতল জেলার বসবাসরত আদিবাসীদের ভূমি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে ভূমি মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করা হয়। এসময় ভূমিমন্ত্রী এসকল সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। এখন আদিবাসী নেতৃবৃন্দ আশা করছেন আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হতে হয় এমন সকল কার্যক্রম অচিরেই বন্ধ হবে।